অ্যানালগ থার্মোমিটার নাকি ডিজিটাল থার্মোমিটার? কোনটি বেশি ভালো? | Techtunes

ইন্টারনেট ইলেক্ট্রনিক্স কম্পিউটার কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জানুন প্রযুক্তি


শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার থেকে বেড়ে গেলে আমরা তাকে জ্বর বলি৷ শরীরে জ্বরের মাত্রা কতোটুকু তা বোঝার জন্য আমরা থার্মোমিটার ব্যবহার করে থাকি৷ অর্থাৎ থার্মোমিটার এর সাহায্যে আমরা শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করি। আর থার্মোমিটার এর ফলাফল অনুযায়ী উপযুক্ত পথ্য সেবন করি কিংবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই।

আগে জ্বর হলেই সরাসরি নিকটস্থ ডাক্তারের চেম্বারে বা ফার্মেসিতে গিয়ে জ্বর মাপার প্রচলন ছিল৷ কিন্তু এখন প্রতিটি সচেতন মানুষের ঘরেই একটি থার্মোমিটার থাকে৷ হয়তো আপনিও থার্মোমিটার কেনার আগে কিছু তথ্য জানতেই এই টিউনটি পড়ছেন৷ কেননা থার্মোমিটার এর মধ্যে আলাদা আলাদা ধরন রয়েছে৷ তাই কোন থার্মোমিটার সবথেকে ভালো হবে তা জেনে নেয়া জরুরি।

সাধারণত থার্মোমিটার দুই ধরনের হয়ে থাকে৷ একটি হলো পারদ থার্মোমিটার বা অ্যানালগ থার্মোমিটার আর অন্যটি হলো ডিজিটাল থার্মোমিটার। অনেকেই কনফিউশানে পড়ে যান যে কোন থার্মোমিটার কিনবেন। তাহলে চলুন এই দুটি থার্মোমিটার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। এরপর আপনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে কোন থার্মোমিটার সবথেকে ভালো।

অ্যানালগ থার্মোমিটার

অ্যানালগ থার্মোমিটার 

অ্যানালগ থার্মোমিটার মূলত একটি চিকন কাচের নল দিয়ে তৈরি৷ এর মধ্যে পারদের একটি টিউব রয়েছে৷ সাধারণত পারদ তাপ দিলে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। তাই যখন শরীরের তাপমাত্রায় থার্মোমিটার এর টিপ গরম হয় তখন পারদের আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে তা উপরের দিকে উঠে যায়৷ পারদের লেভেল কতোটুকু উপরে উঠল তার ওপরে নির্ভর করে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। কাচের নলের গায়ে ৯৮ থেকে ১০৮ পর্যন্ত স্কেল করা থাকে তাই পারদের লেভেল কতোটুকু উপরে উঠল তা খুব সহজেই বের করা যায়।

চলুন এবার অ্যানালগ থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম জেনে নেয়া যাক। পারদ থার্মোমিটার ব্যবহারের পূর্বে এটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হয়। যতোক্ষণ পর্যন্ত পারদের লেভেল সর্বনিম্ন স্কেলে পৌছে যায় ততোক্ষণ পর্যন্ত এটি ঝাঁকাতে হবে। এরপর থার্মোমিটার এর টিপ টি মুখের ভেতর জিহ্বার নিচে বা বগলে রাখতে হবে। এই অবস্থায় দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

এরপর থার্মোমিটার টি হাতে নিয়ে দেখবেন পারদের উচ্চতা স্কেলের কোন পয়েন্টে আছে। এভাবে থার্মোমিটার এর ওপরে দাগের ওপর ভিত্তি করে তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে৷ তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, বাচ্চাদের জ্বর মাপার ক্ষেত্রে অ্যানালগ থার্মোমিটার কখনো মুখের ভেতরে দেবেন না। কেননা যে কোনো সময় বাচ্চারা এটি কামড় দিয়ে ভেঙে ফেলতে পারে৷ এতে করে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ আর জ্বর মাপার সময় টাইমিং এর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, কেননা দুই মিনিটের কম সময়ে থার্মোমিটার বের করে ফেললে তা সঠিক তাপমাত্রা না-ও দেখাতে পারে।

অনেকেই হয়তো জানেন না অ্যানালগ থার্মোমিটার এর দাম কত। সাধারণ স্থান ও ব্রান্ড ভেদে একটি অ্যানালগ থার্মোমিটার এর দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে এর থেকে উচ্চ ব্রান্ডের থার্মোমিটার রয়েছে। কিন্তু বাড়িতে সচরাচর ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানের একটি থার্মোমিটার রাখলেই চলে।

ডিজিটাল থার্মোমিটার

ডিজিটাল থার্মোমিটার 

ডিজিটাল ডিসপ্লে যুক্ত এবং ছোট একটি বাটন যুক্ত যে থার্মোমিটার বাজারে এসেছে সেটাকে মূলত ডিজিটাল থার্মোমিটার বলা হয়। ডিজিটাল থার্মোমিটার পুরোপুরি ইলেকট্রিক উপায়ে কাজ করে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা ডিজিটাল ডিসপ্লের ওপরে সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। ডিজিটাল থার্মোমিটার মূলত প্লাস্টিক মেটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়।

চলুন জেনে নেয়া যাক ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহারের নিয়ম। থার্মোমিটার এর ডিসপ্লের নিচে একটি ছোট বাটন রয়েছে৷ ঐ বাটনে প্রেস করলে একটা বিপ শব্দ হবে৷ শব্দ হলেই বুঝতে পারবেন এটি রিফ্রেশ হয়ে চালু হয়েছে। এবার থার্মোমিটার এর টিপ টি জিহ্বার নিচে, বগলে কিংবা দুই আঙুলের মাথায় রেখে চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে। এভাবে কতক্ষণ ধরে রাখলে আবার একটি বিপ শব্দ হবে এবং তখন থার্মোমিটার টি ছেড়ে দিতে হবে৷ এবার ডিসপ্লেতে সঠিক তাপমাত্রা দেখতে পারবেন৷

মূলত বিপ শব্দ হওয়ার সাথে সাথে এর কাজ শেষ হয়। ফলে তখন থার্মোমিটার বের করে নিলেই হয়। তবে শব্দ হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে ধরে রাখতে হবে৷ কাজ শেষে আবার ছোট বাটনে ক্লিক করে থার্মোমিটার টি অফ করে রাখতে হবে।

হয়তো ভাবছেন ডিজিটাল থার্মোমিটার এর দাম খুব বেশি হবে। এটা একদমই ভুল ধারণা। সাধারণত বাড়িতে রেগুলার ব্যবহারের জন্য ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে একটি থার্মোমিটার কিনতে পারবেন৷ এই ডিভাইসটি আপনাকে লং টাইম সার্ভিস দিতে পারবে।

ডিজিটাল ও অ্যানালগ থার্মোমিটার এর মধ্যে কোনটি সবথেকে ভালো?

ডিজিটাল ও অ্যানালগ থার্মোমিটার এর মধ্যে কোনটি সবথেকে ভালো

মূলত ডিজিটাল ডিভাইস গুলো বাজারে আসেই অ্যানালগ ডিভাইস গুলেকে পেছনে ফেলতে। ডিজিটাল থার্মোমিটার-ও এর ব্যতিক্রম নয়। অ্যানালগ থার্মোমিটার এর নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ডিজিটাল থার্মোমিটার যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা নিয়ে বাজারে এসেছে৷ অ্যানালগ থার্মোমিটার বারবার ঝাঁকিয়ে এটাকে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। অন্যদিকে ডিজিটাল থার্মোমিটার রিফ্রেশ করার জন্য একটি বাটনে ক্লিক করলেই কাজ হয়ে যায়। অ্যানালাগ থার্মোমিটারে জ্বর মাপার সময় ঘড়ি ধরে বসে থাকতে হয়। ঠিক সময়ে এটি ছেড়ে দিয়ে দাগ মেপে তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে ডিজিটাল থার্মোমিটারে তাপমাত্রা পুরোপুরি ওঠার পরে ডিভাইসটি অটোমেটিক শব্দ করে সংকেত দিতে থাকে৷ এদিক থেকে দেখা যায়, ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা খুবই সহজ।

অ্যানালগ থার্মোমিটার কাচের তৈরি বিধায় এটি খুব সহজেই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ কিন্তু ডিজিটাল থার্মোমিটার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের তৈরি তাই এটি সহজে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাচ্চাদের নাগালে থাকলেও তেমন একটা সমস্যা হয় না বললেই চলে৷ আবার একটি সাধারন ডিজিটাল থার্মোমিটার এর মূল্য তুলনামূলক কম বিধায় এটি আপনি সহজেই ক্রয় করতে পারবেন৷ ডিজিটাল ডিসপ্লে থাকায় এর তাপমাত্রা নির্নয় করতেও খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় না।

ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা যেমন সহজ তেমনই আবার অনেকদিন লাস্টিং করার সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাই বাড়িতে সাধারণত ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার ক্রয় করাই ভালো৷ কেননা এটি চাইলেই যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। আলাদা করে কিছু শিখতে হবে না।

শেষকথা

আশাকরি ডিজিটাল থার্মোমিটার এবং অ্যানালগ থার্মোমিটার সম্পর্কে ইতোমধ্যে স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন। আর সিদ্ধান্তও নিতে পেরেছেন যে আপনি কোন থার্মোমিটার টি ক্রয় করবেন। এখানে আমি দুইটি থার্মোমিটার ব্যবহারের সাপেক্ষে আমরা ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেছি। এবার আপনি আপনার রুচি অনুযায়ী যে কোনো একটি থার্মোমিটার ক্রয় করতে পারবেন৷ ধন্যবাদ।


#অযনলগ #থরমমটর #নক #ডজটল #থরমমটর #কনট #বশ #ভল #Techtunes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *